ভারত ছাড়া চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি
- By Jamini Roy --
- 11 November, 2024
আগামী বছর পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে। ভারত পাকিস্তানে খেলতে যাবে কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে দীর্ঘদিন ধরে, এবং অবশেষে ভারত ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই) সাফ জানিয়ে দিয়েছে, তারা পাকিস্তানে টুর্নামেন্টে অংশ নেবে না। ভারতীয় দলের এই সিদ্ধান্তের পর পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি আয়োজনের পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে। তারা আইসিসির কাছে ভারতকে ছাড়াই এই টুর্নামেন্ট আয়োজনের ইচ্ছা প্রকাশ করেছে।
গত সপ্তাহে বিসিসিআই তাদের সিদ্ধান্ত জানিয়ে একটি ই-মেইল পাঠিয়েছে আইসিসির কাছে, যা এখন পিসিবির হাতে এসেছে। এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তান সরকার ও পিসিবির কিছু সূত্র জানায়, তারা ভারত ছাড়া চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি আয়োজনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে। ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি-মার্চে পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা এই ৮ দলের টুর্নামেন্ট, যার সূচি ১১ নভেম্বর ঘোষণা হওয়ার কথা ছিল, তবে ভারতীয় সিদ্ধান্তের কারণে তা স্থগিত রাখা হয়েছে।
পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের চেয়ারম্যান মহসীন নকভি জানান, ভারতকে ছাড়াই টুর্নামেন্ট আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়ে তারা আইসিসির কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে দেবেন। পিসিবি সূত্রে বলা হয়েছে, ভারত সরকারের একগুঁয়ে অবস্থানের কারণে পাকিস্তানও নিজেদের পছন্দমতো সিদ্ধান্ত নিতে চাইছে। যদিও ভারতের এই সিদ্ধান্ত পাকিস্তানের অর্থনৈতিক ক্ষতির কারণ হতে পারে, কারণ ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা ও সম্প্রচার স্বত্ত্বের বড় অংশ ভারতীয় বাজার থেকেই আসে। তবে পিসিবির কর্মকর্তারা মনে করছেন, পাকিস্তান-ভারত ম্যাচ বয়কট করলে দু'দেশই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
অন্যদিকে, ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আসর শুরু হওয়ার আগে পাকিস্তান সরকার এবং পিসিবি তাদের সিদ্ধান্তে দৃঢ় রয়েছে। তারা নিশ্চিত করেছে, ভারতের সঙ্গে খেলতে না চাওয়ার ফলে তারা আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতকে মুখোমুখি না হওয়ার কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এক সূত্র জানিয়েছে, ‘যতদিন না ভারত পাকিস্তানে এসে খেলবে, ততদিন কোনো টুর্নামেন্টে ভারতকে আমরা স্বাগত জানাব না।’
এছাড়া, পাকিস্তান ক্রিকেটের কিছু কিংবদন্তি, যেমন জাভেদ মিয়াঁদাদ এবং ইনজামাম-উল-হক, ভারতের এই সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ। মিয়াঁদাদ জানিয়েছেন, ‘ভারত খেলতে না এলে পাকিস্তান ভালো খেলবে এবং উন্নতি করবে। আমরা ইতোমধ্যেই প্রমাণ করেছি, ভারতের সঙ্গে না খেললেও পাকিস্তান ক্রিকেট টিকে থাকবে।’ পাকিস্তানের ক্রিকেট বোর্ডের কর্মকর্তাদের মতে, ভারতের উপস্থিতি ছাড়াই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি সফলভাবে আয়োজিত হতে পারে।
এর আগে ২০০৮ সালের পর ভারত আর পাকিস্তানে কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেনি। ২০১২-২০১৩ সালের পর দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সিরিজও অনুষ্ঠিত হয়নি। গত বছর পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত এশিয়া কাপেও ভারতীয় ম্যাচগুলো শ্রীলঙ্কায় আয়োজন করা হয়েছিল। এই প্রেক্ষাপটে ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেট সম্পর্কের উত্তেজনা দিন দিন বাড়ছে।
পাকিস্তানের গণমাধ্যম এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পিসিবি ভবিষ্যতে ভারতের সঙ্গে কোনো টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ না করার মত কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এর পাশাপাশি, পাকিস্তান সরকার ২০৩৬ সালের অলিম্পিক আয়োজনে ভারতকে বিরোধিতা করতে পারে।
এদিকে, পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেট তারকা ইনজামাম-উল-হক ভারতের সিদ্ধান্তে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে জানিয়েছেন, পাকিস্তানে ভারতীয় দল খেলতে না আসার সিদ্ধান্ত শুধুমাত্র পাকিস্তান নয়, ভারতও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানে ভারতের নিরাপত্তা নিয়ে কোনো সমস্যা নেই এবং আমরা তাদের সেরা আতিথেয়তা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত।’